ইন্টারনেট আসক্তি: অবাক করা সমাধান যা আপনার জীবন বদলে দেবে

webmaster

A person with tired eyes and subtle dark circles, illuminated by the harsh blue light of a smartphone screen in a dim room late at night or early morning. The phone appears as the sole focus of their attention, suggesting an all-consuming addiction. The atmosphere conveys a sense of isolation and weariness, reflecting the physical and mental toll of excessive screen time.

ইন্টারনেট আজ আমাদের জীবনের প্রতিটি স্তরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে মিশে গেছে। সকালে ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা অনেকেই অজান্তেই ডিজিটাল স্ক্রিনে বুঁদ হয়ে থাকি। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, এই আপাত নিরীহ অভ্যাস কখন যে গুরুতর আসক্তিতে রূপান্তরিত হয়, তা আমরা টেরই পাই না। বিশেষ করে বর্তমান যুগে সোশ্যাল মিডিয়া, অনলাইন গেমিং এবং নিত্যনতুন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো এমনভাবে আমাদের মনকে গ্রাস করছে যে এর থেকে বেরিয়ে আসাটা প্রায় অসম্ভব মনে হয়।নতুন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ইন্টারনেট আসক্তি এখন শুধু সময় কাটানোর বিষয় নয়, এটি একটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এর ফলে ঘুমের অভাব, মনোযোগের অভাব, সামাজিক সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্নতা এমনকি বিষণ্ণতার মতো গুরুতর সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এই প্রবণতা ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, যেখানে ভার্চুয়াল জগৎ বাস্তব জীবনকে ছাপিয়ে যাবে। তাই, এখনই সচেতন হওয়া এবং এই আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় খুঁজে বের করা অত্যন্ত জরুরি। আর্টিকেলে বিস্তারিত জানুন।

ইন্টারনেট আজ আমাদের জীবনের প্রতিটি স্তরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে মিশে গেছে। সকালে ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা অনেকেই অজান্তেই ডিজিটাল স্ক্রিনে বুঁদ হয়ে থাকি। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, এই আপাত নিরীহ অভ্যাস কখন যে গুরুতর আসক্তিতে রূপান্তরিত হয়, তা আমরা টেরই পাই না। বিশেষ করে বর্তমান যুগে সোশ্যাল মিডিয়া, অনলাইন গেমিং এবং নিত্যনতুন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো এমনভাবে আমাদের মনকে গ্রাস করছে যে এর থেকে বেরিয়ে আসাটা প্রায় অসম্ভব মনে হয়।নতুন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ইন্টারনেট আসক্তি এখন শুধু সময় কাটানোর বিষয় নয়, এটি একটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এর ফলে ঘুমের অভাব, মনোযোগের অভাব, সামাজিক সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্নতা এমনকি বিষণ্ণতার মতো গুরুতর সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এই প্রবণতা ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, যেখানে ভার্চুয়াল জগৎ বাস্তব জীবনকে ছাপিয়ে যাবে। তাই, এখনই সচেতন হওয়া এবং এই আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় খুঁজে বের করা অত্যন্ত জরুরি। আর্টিকেলে বিস্তারিত জানুন।

ডিজিটাল জীবন থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া

আসক - 이미지 1
আমার নিজের কথাই বলি, একসময় রাত জেগে ফোন ঘাঁটা আমার নিত্যদিনের অভ্যাস ছিল। সকালে উঠে অবসাদ, চোখের নিচে কালি – এ যেন আমার নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছিল। তখন মনে হয়েছিল, এই জাল থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় নেই। কিন্তু যখন আমি সত্যিই চেষ্টা শুরু করলাম, তখন বুঝলাম যে ডিজিটাল জগৎ থেকে নিজেকে একটু দূরে সরিয়ে রাখাটা অসম্ভব নয়, বরং বেশ কঠিন হলেও সম্ভব। এই প্রক্রিয়াটা ধীর হলেও এর ফলাফল দারুণ। নিজেকে কিছুটা গুটিয়ে নিতে পারলে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য অনেক ভালো থাকে। প্রথম প্রথম হয়তো একটু অস্বস্তি হবে, কিন্তু বিশ্বাস করুন, দীর্ঘমেয়াদী সুফল পেতে হলে এই অস্বস্তিটুকু মানিয়ে নিতেই হবে। নতুন কিছু শিখতে গেলে যেমন প্রাথমিক কষ্ট হয়, এটাও ঠিক তেমনই।

১. নিজের অভ্যাসগুলো চিহ্নিত করুন

প্রথমেই নিজের দৈনন্দিন ইন্টারনেট ব্যবহারের অভ্যাসগুলো চিহ্নিত করা জরুরি। আমি একটি ছোট ডায়েরি ব্যবহার করে আমার ইন্টারনেট ব্যবহারের সময়, কী কী ওয়েবসাইট বা অ্যাপ ব্যবহার করছি, এবং কতক্ষণ ধরে ব্যবহার করছি, তার একটি তালিকা তৈরি করেছিলাম। যেমন, সকালবেলা ঘুম ভাঙতেই ইনস্টাগ্রাম স্ক্রল করা, দুপুরে খাওয়ার সময় ইউটিউব দেখা, বা রাতের বেলা বন্ধুদের সাথে অনলাইন গেম খেলা – এই সব অভ্যাসগুলো চিহ্নিত করুন। এটা আপনাকে বুঝতে সাহায্য করবে যে ঠিক কোন সময়ে এবং কোন প্ল্যাটফর্মে আপনি সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করছেন। এরপর সে অনুযায়ী কৌশল তৈরি করতে সুবিধা হবে।

২. ডিজিটাল ডিটক্সের কৌশল

ডিজিটাল ডিটক্স মানে একদিনে সব ছেড়ে দেওয়া নয়। এটা একটা ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়া প্রক্রিয়া। আমি প্রথমে ঠিক করেছিলাম যে, রাতে ঘুমানোর এক ঘণ্টা আগে ফোন ব্যবহার করব না। তারপর ধীরে ধীরে সকালের দিকেও ফোন থেকে নিজেকে দূরে রাখতে শুরু করলাম। দিনের বেলায় যখন কাজ করি, তখন অপ্রয়োজনীয় নোটিফিকেশন বন্ধ করে রাখলে মনোযোগ অনেক বাড়ে। আপনিও ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন, যেমন – সপ্তাহে একদিন ফোন ছাড়াই বাইরে ঘুরতে যাওয়া, বা দিনে একটি নির্দিষ্ট সময় সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকা। দেখবেন, এগুলো আপনাকে অনেক সাহায্য করবে।

প্রযুক্তিকে নিয়ন্ত্রণে আনার পথ

আমরা অনেকেই মনে করি প্রযুক্তি আমাদের বন্ধু, কিন্তু যখন তা আসক্তিতে পরিণত হয়, তখন সেটি আর বন্ধু থাকে না। বরং সে আমাদের জীবনের লাগাম নিজের হাতে তুলে নেয়। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, প্রযুক্তিকে আপনি কতটা ব্যবহার করবেন, সেই নিয়ন্ত্রণটা আপনার হাতেই রাখা উচিত। এমন নয় যে প্রযুক্তি খারাপ, কিন্তু আমরা যদি এর সঠিক ব্যবহার না শিখি, তবে এর খারাপ দিকগুলোই প্রকট হয়ে ওঠে। প্রযুক্তিকে আপনার কাজে লাগান, যেন সে আপনার জীবনকে আরও সহজ করে তোলে, আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট না করে। এই ভারসাম্য বজায় রাখাটাই আসল চ্যালেঞ্জ।

১. সময়সীমা নির্ধারণ

নিজের ডিজিটাল ব্যবহারের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা অত্যন্ত কার্যকর একটি উপায়। উদাহরণস্বরূপ, আমি ঠিক করেছিলাম যে দিনে এক ঘণ্টার বেশি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করব না। এর জন্য বিভিন্ন অ্যাপ রয়েছে যা আপনার স্ক্রিন টাইম ট্র্যাক করতে পারে এবং নির্দিষ্ট সময় পর অ্যাপ বন্ধ করে দিতে পারে। প্রথম দিকে এই নিয়ম মানতে বেশ কষ্ট হয়েছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে এটা অভ্যাসে পরিণত হয়। আপনি যদি নিজেকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন, তবে দেখবেন সময়ের সাথে সাথে এটি কতটা সহজ হয়ে যায়।

২. অফলাইন কার্যকলাপের গুরুত্ব

ডিজিটাল জগৎ থেকে মনোযোগ সরানোর জন্য অফলাইন কার্যকলাপের গুরুত্ব অপরিসীম। আমি আবার পুরনো শখগুলো খুঁজে বের করতে শুরু করলাম – বই পড়া, বাগান করা, বন্ধুদের সাথে সরাসরি দেখা করা, বা নতুন কোনো সৃজনশীল কাজে নিজেকে যুক্ত করা। এসব কাজ আমাদের মনকে সতেজ করে এবং ইন্টারনেট আসক্তি থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। যখন আপনি বাস্তব জীবনে আরও বেশি সক্রিয় থাকবেন, তখন ভার্চুয়াল জগতের প্রতি আপনার আকর্ষণ অনেকটাই কমে আসবে।

সম্পর্কের উন্নতি ও মানসিক শান্তি

ইন্টারনেট আসক্তি শুধু আমাদের ব্যক্তিগত জীবনেই নয়, আমাদের সামাজিক সম্পর্কগুলোতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আমি দেখেছি, যখন আমি ফোনে ব্যস্ত থাকতাম, তখন পরিবারের সদস্যদের সাথে আমার যোগাযোগ কমে গিয়েছিল। তারা কিছু বলতে এলেও আমি হয়তো তাদের কথা পুরোপুরি শুনতে পারতাম না, কারণ আমার মনোযোগ ফোনের স্ক্রিনে আটকে থাকত। এই বিষয়টা আমার মনে ভীষণ কষ্ট দিত। কিন্তু যখন আমি আমার ইন্টারনেট ব্যবহারের লাগাম টেনে ধরলাম, তখন আমার সম্পর্কের উন্নতি হতে শুরু করল। পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে আরও বেশি সময় কাটানোর সুযোগ তৈরি হলো, যা আমার মানসিক শান্তি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করেছে।

১. পরিবারের সাথে সময় কাটানো

আমি বিশ্বাস করি, পরিবারের সাথে সময় কাটানো মানসিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। ডিজিটাল আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার অন্যতম সেরা উপায় হলো পরিবার এবং প্রিয়জনদের সাথে বাস্তব যোগাযোগ বাড়ানো। আমি আমার পরিবারের সাথে রাতের খাবার খাওয়ার সময় ফোন ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিয়েছি। এতে করে আমরা একে অপরের সাথে মন খুলে কথা বলতে পারি, সারাদিনের ঘটনাগুলো ভাগ করে নিতে পারি। দেখবেন, এই ছোট পরিবর্তনগুলো আপনার পারিবারিক বন্ধনকে কতটা মজবুত করে তোলে।

২. সামাজিক মিথস্ক্রিয়া বৃদ্ধি

ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামের ‘লাইক’ বা ‘কমেন্ট’ হয়তো আপনাকে সাময়িক আনন্দ দেয়, কিন্তু বাস্তব জীবনের হাসি-ঠাট্টা আর আন্তরিক কথোপকথনের কোনো বিকল্প নেই। আমি আমার পুরনো বন্ধুদের সাথে আবারও নিয়মিত দেখা করা শুরু করেছি। ক্যাফেতে বসে আড্ডা দেওয়া, একসাথে পার্কে হাঁটা – এই সব অভিজ্ঞতা ভার্চুয়াল জগতের কোনো কিছুর সঙ্গেই তুলনীয় নয়। এতে আপনার একাকীত্ব দূর হবে এবং আপনি নতুন করে সামাজিক বন্ধন অনুভব করবেন।

ইন্টারনেট আসক্তির লক্ষণ ও ফলাফল

ইন্টারনেট আসক্তিকে অনেকেই হালকাভাবে নেন, কিন্তু এর কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষণ রয়েছে যা মনোযোগ দাবি করে। আমার একজন বন্ধু ছিল, যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনলাইন গেমে মগ্ন থাকত। সে খাওয়া-দাওয়া, ঘুম, এমনকি ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার দিকেও মনোযোগ দিত না। তাকে দেখে আমার উপলব্ধি হয়েছিল যে, এটি শুধু একটি শখ নয়, এটি একটি গুরুতর সমস্যা। ইন্টারনেট আসক্তি শারীরিক এবং মানসিক উভয় দিকেই মারাত্মক প্রভাব ফেলে, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে বিঘ্নিত করে তোলে।

১. শারীরিক লক্ষণসমূহ

ইন্টারনেট আসক্তির কিছু সাধারণ শারীরিক লক্ষণ রয়েছে যা প্রায়শই উপেক্ষা করা হয়। যেমন, চোখের ক্লান্তি, মাথা ব্যথা, ঘুমের অভাব, পিঠ বা ঘাড়ে ব্যথা এবং হাতের কব্জিতে ব্যথা (কার্পাল টানেল সিন্ড্রোম)। আমার নিজের ক্ষেত্রে, অনিয়মিত ঘুমের কারণে দিনের বেলায় প্রচন্ড ক্লান্তি এবং মনোযোগের অভাব দেখা যেত। আপনি যদি নিয়মিত এই ধরনের লক্ষণগুলো অনুভব করেন, তবে আপনার ইন্টারনেট ব্যবহারের মাত্রা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার সময় হয়েছে।

২. মানসিক ও আচরণগত পরিবর্তন

মানসিক স্তরে ইন্টারনেট আসক্তি বিষণ্ণতা, উদ্বেগ, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা এবং মেজাজ পরিবর্তনের কারণ হতে পারে। আমি লক্ষ্য করেছি, অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে আমি প্রায়শই হতাশ এবং অস্থির হয়ে উঠতাম। যখন ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারতাম না, তখন বিরক্ত লাগত। আসক্ত ব্যক্তিরা প্রায়শই মিথ্যা কথা বলে তাদের অনলাইন কার্যকলাপের সময়সীমা লুকানোর চেষ্টা করে, এবং যখন ইন্টারনেট থেকে দূরে থাকে তখন অস্বস্তিবোধ করে। এই লক্ষণগুলো দেখলে বুঝবেন, পরিস্থিতি গুরুতর আকার ধারণ করছে।

লক্ষণ বিবরণ
অতিরিক্ত সময় ব্যয় ইন্টারনেটে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সময় কাটানো।
বিরক্তি বা অস্থিরতা ইন্টারনেট ব্যবহার না করতে পারলে বিরক্ত বা অস্থির বোধ করা।
সম্পর্কের অবনতি পরিবার ও বন্ধুদের সাথে সম্পর্কের অবনতি।
শারীরিক সমস্যা চোখে ব্যথা, ঘুম না হওয়া, ঘাড়ে ব্যথা ইত্যাদি।
দায়িত্বে অবহেলা কাজ, পড়াশোনা বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে অমনোযোগী হওয়া।

নিজেকে সাহায্য করার উপায়

অনেক সময় মনে হয়, আমি কি পারব এই আসক্তি থেকে বের হতে? সত্যি বলতে কি, আমি নিজেই একসময় ভেবেছিলাম এটা অসম্ভব। কিন্তু নিজের ওপর বিশ্বাস রাখাটা খুব জরুরি। আমি ছোট ছোট পদক্ষেপ নিয়ে শুরু করেছিলাম এবং প্রতিটি ছোট সাফল্য আমাকে আরও এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। নিজেকে সাহায্য করার জন্য প্রয়োজন একটি দৃঢ় মানসিকতা এবং কিছু বাস্তবসম্মত কৌশল। মনে রাখবেন, এই লড়াইয়ে আপনি একা নন। সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে আপনি নিশ্চিতভাবেই আপনার জীবনের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাবেন।

১. পেশাদার সাহায্য গ্রহণ

যদি আপনি মনে করেন যে নিজে নিজে এই আসক্তি থেকে বের হওয়া আপনার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না, তবে পেশাদার সাহায্য নেওয়াটা খুবই জরুরি। একজন মনোবিজ্ঞানী বা থেরাপিস্ট আপনাকে আসক্তির কারণ বুঝতে এবং তা থেকে বেরিয়ে আসার কার্যকর কৌশল শিখতে সাহায্য করতে পারেন। আমার একজন পরিচিত ব্যক্তি এমন সমস্যায় পড়ে থেরাপির সাহায্য নিয়েছিলেন এবং তিনি অসাধারণ ফল পেয়েছেন। মনে রাখবেন, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় সাহায্য চাওয়াটা কোনো দুর্বলতার লক্ষণ নয়, বরং এটি আপনার সাহসের পরিচয়।

২. বিকল্প শখ ও কার্যকলাপ

ইন্টারনেটের বিকল্প হিসেবে নতুন শখ তৈরি করা বা পুরনো শখগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করা একটি চমৎকার উপায়। আমি আমার ফেলে রাখা গিটারটি আবার হাতে তুলে নিয়েছিলাম, আর প্রতিদিন কিছু সময় অনুশীলন করতে শুরু করলাম। এতে আমার মন অন্য দিকে যায় এবং একটি সৃজনশীল কাজে আমার সময় ব্যয় হয়। আপনিও এমন কিছু করতে পারেন যা আপনাকে আনন্দ দেয় এবং ইন্টারনেটের বাইরে আপনার মনকে ব্যস্ত রাখে – যেমন খেলাধুলা, ছবি আঁকা, লেখালেখি, বা যেকোনো ধরনের সামাজিক কাজ। এই বিকল্পগুলো আপনাকে জীবনের নতুন দিকগুলো আবিষ্কার করতে সাহায্য করবে।

উপসংহার

ইন্টারনেট আজ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, কিন্তু এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের মানসিক শান্তি এবং সম্পর্কের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, সচেতন প্রচেষ্টা এবং সঠিক কৌশল অবলম্বন করলে এই আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। নিজেকে একটু গুটিয়ে নিয়ে, অফলাইন কার্যকলাপের সাথে যুক্ত হয়ে এবং প্রয়োজনে পেশাদার সাহায্য নিয়ে আপনিও আপনার জীবনের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে পারেন। মনে রাখবেন, একটি ভারসাম্যপূর্ণ ডিজিটাল জীবনযাপনই আপনাকে সত্যিকারের মানসিক মুক্তি এবং আনন্দ দেবে।

জেনে রাখা ভালো

1. নিজের অভ্যাস চিহ্নিত করুন: ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় এবং ধরন চিহ্নিত করুন, যা আপনাকে সমস্যার মূল বুঝতে সাহায্য করবে।

2. ডিজিটাল ডিটক্সের কৌশল: ছোট ছোট পদক্ষেপের মাধ্যমে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকে নিজেকে ধীরে ধীরে দূরে সরিয়ে নেওয়ার অভ্যাস করুন।

3. সময়সীমা নির্ধারণ করুন: দৈনিক ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিন এবং তা কঠোরভাবে মেনে চলুন।

4. অফলাইন কার্যকলাপে মনোযোগ: বই পড়া, বাগান করা, খেলাধুলা বা সামাজিক মেলামেশার মতো অফলাইন শখগুলো আবার শুরু করুন।

5. পেশাদার সাহায্য: যদি নিজে নিজে সমস্যা সমাধান করতে না পারেন, তবে একজন মনোবিজ্ঞানী বা থেরাপিস্টের সাহায্য নিতে দ্বিধা করবেন না।

মূল বিষয়গুলি

ইন্টারনেট আসক্তি একটি গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যা আমাদের শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক জীবনকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। সচেতনতা, আত্মনিয়ন্ত্রণ, অফলাইন কার্যকলাপে অংশগ্রহণ এবং প্রয়োজনে পেশাদার সাহায্য গ্রহণের মাধ্যমে এই আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। একটি ভারসাম্যপূর্ণ ডিজিটাল জীবনযাপনই সুস্থ ও শান্তিপূর্ণ জীবনের চাবিকাঠি।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) 📖

প্র: ইন্টারনেট আসক্তির প্রধান লক্ষণ বা উপসর্গগুলো কী কী?

উ: আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, এই আসক্তিটা অনেকটা নীরবে বাসা বাঁধে। প্রথমত, খেয়াল করবেন যে আপনি অজান্তেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্ক্রিনে আটকে থাকছেন, অথচ কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়, কারণ সারাক্ষণ মনে হয় আরও কিছু দেখতে হবে বা জানতে হবে। এরপর আসে মনোযোগের অভাব – একটা জিনিস বেশিক্ষণ ধরে মন দিয়ে করতে পারছেন না, যেন মনটা বার বার ডিজিটাল জগতের দিকে ছুটে যাচ্ছে। সবচেয়ে কষ্টকর হলো, বাস্তব জীবনের সম্পর্কগুলো ফিকে হয়ে যায়। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে বসেও ফোনে বুঁদ হয়ে থাকা, বা পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলার চেয়ে অনলাইন গেমকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া – এসবই খুব সাধারণ লক্ষণ। নিজের ভেতরের অস্থিরতা, উদ্বেগ আর একাকীত্বও বাড়ে, অনেক সময় বিষণ্ণতাও গ্রাস করে। যখন দেখি কেউ নিজের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ ফেলে রেখেও অনলাইনে থাকছে, তখন বুঝি বিপদটা কতটা গভীর!

প্র: কেন ইন্টারনেট আসক্তিকে নিছকই একটি বদঅভ্যাস না বলে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বলা হচ্ছে?

উ: দেখুন, বদঅভ্যাস আর মানসিক সমস্যার মধ্যে একটা সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে। বদঅভ্যাস চাইলেই হয়তো কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়, কিন্তু যখন কোনো আচরণ আপনার দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে, আপনার ঘুম, কাজ, সম্পর্ক – সবকিছুকেই নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে, তখন সেটা নিছকই আর বদঅভ্যাস থাকে না। আমার মনে হয়, এটা অনেকটা মাদকের আসক্তির মতোই। মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সিস্টেম এমনভাবে কাজ করে যে বারবার ডিজিটাল উদ্দীপনা পেতে চায়, যা ডোপামিন নিঃসৃত করে এক ধরনের ক্ষণস্থায়ী আনন্দ দেয়। এই আনন্দ পেতে পেতে মানুষ একসময় এমন একটা চক্রে আটকে যায়, যেখান থেকে বেরিয়ে আসাটা খুব কঠিন। বিশেষজ্ঞদের কথাতেই তো আছে, এর কারণে মানুষ সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, বিষণ্ণতা বাড়ে, উদ্বেগ বা প্যানিক অ্যাটাক পর্যন্ত হতে পারে। শরীরের উপরও এর মারাত্মক প্রভাব পড়ে, যেমন – চোখের সমস্যা, ঘাড় ও পিঠে ব্যথা। তাই, এর গভীরতা আর ক্ষতিকর দিকগুলো বিবেচনা করে একে এখন গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

প্র: এই ইন্টারনেট আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা কী কী পদক্ষেপ নিতে পারি?

উ: মুক্তি পাওয়ার উপায় কিন্তু আছে, যদিও কাজটা কঠিন। আমার মনে হয়, প্রথম ধাপ হলো সমস্যাটা স্বীকার করা। নিজেকে প্রশ্ন করা, “আমি কি সত্যিই আসক্ত?” এরপর একটা ডিজিটাল ডিটক্সের কথা ভাবা যেতে পারে – দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়, যেমন রাতে ঘুমানোর আগে বা খাওয়ার সময়, ফোন বা ইন্টারনেট থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকা। নোটিফিকেশন বন্ধ রাখা একটা দারুণ উপায়, এতে বারবার স্ক্রিন চেক করার প্রবণতা কমে। ব্যক্তিগতভাবে আমি দেখেছি, যদি আমরা আমাদের বাস্তব জীবনের শখ বা আগ্রহগুলোকে আবার জাগিয়ে তুলতে পারি – যেমন বই পড়া, গান শোনা, খেলাধুলা করা বা বন্ধুদের সাথে সরাসরি দেখা করা – তাহলে ডিজিটাল স্ক্রিনের আকর্ষণ অনেকটাই কমে আসে। প্রয়োজনে মনোবিজ্ঞানী বা কাউন্সেলরের সাহায্য নিতে দ্বিধা করবেন না। তারা সঠিক পথ দেখাতে পারেন। মনে রাখবেন, ভার্চুয়াল জগৎটা আমাদের জীবনের অংশ, কিন্তু পুরো জীবন নয়। বাস্তব জীবনের আনন্দ আর সম্পর্কগুলোই আসল।